AlMunadiyaPostAd

ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি কি? বাংলাদেশে ধর্ষণের শাস্তি | পাকিস্তানে ধর্ষণের শাস্তি কি?



ইসলামি আইনজ্ঞদের মতে ইসলামে ধর্ষণের জন্য ধর্ষকের ‘মুহারাবা’ ও ব্যভিচারের শাস্তি হবে।


মুহারাবা হলো,পথে অথবা অন্য কোথাও অস্ত্র দেখিয়ে বা অস্ত্র ব্যতীত ভয় প্রদর্শন করে ডাকাতি করা। এতে কেবলমাত্র ধনদৌলত ছিনিয়ে নেওয়া থেকে পারে, আবার কেবল হত্যা করা হতে পারে। আবার উভয়টিই হতে পারে। যেহুতু ধর্ষণে জোরপূর্বক মহিলার সম্ভ্রম ছিনিয়ে নেয়া হয়ে থাকে সেহেতু ধর্ষককে মুহারাবার শাস্তি ব্যবহার করা হবে।


মুহারাবা


‘মুহারাবা’ হচ্ছে অস্ত্র দেখিয়ে বা অস্ত্র ছাড়াই ডর প্রদর্শন করে ডাকাতি করা অথবা লুণ্ঠন করা। এক কথায় ‘মুহারাবা’ হলোঃ

১.পৃথিবীতে অনাচার সৃষ্টি

২.লুণ্ঠন বা ডাকাতি

৩.নিরাপত্তা বিঘ্নিতকরণ

৪.ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা বা সন্ত্রাস

৫.ধর্ষণ

৬.যৌন হয়রানি

৭.অপহরণ

৮.নারী পাচার ইত্যাদি।


এ সব ক্রাইমের শাস্তি হিসেবে মহান আল্লাহ্ তায়ালা ঘোষণা করেনঃ

১.তাদেরকে হ*ত‍্যা করা হবে অথবা

২.শূলীতে চড়ানো হবে অথবা

৩.তাদের হাত-পা বিপরীত পক্ষ থেকে (ডান হাত বাম পা/বাম হাত ডান পা) কেটে দেয়া হবে অথবা

৪.দেশ হতে বহিষ্কার তথা নির্বাসিত করা হবে।


কুরআনে ধর্ষণের শাস্তিঃ

ধর্ষণের শাস্তির বিষয়ে মহান আল্লাহ্ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘যারা স্রষ্টা ও তার রাসুলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে গোলযোগ প্রস্তুত করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে, তাদের সবাইকে হত্যা করা হবে কিংবা শূলিতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত পক্ষ থেকে কেটে দেওয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হলো- তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্চনা আর পরকালে তাদের জন্যে আছে কঠোর শাস্তি। ’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৩৩)


ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে- ‘ধর্ষণের অপরাধে ব্যভিচারের শাস্তি প্রয়োগের একসাথে ‘মুহারাবা’র শাস্তিও ব্যবহার করতে হবে।


ইসলাম এবং মুসলমানদের জন্য ধর্ষণ বা রেপ হচ্ছে আল্লাহ্ ও তার রাসুলের নিয়ম-নীতি বিরুদ্ধ অপরাধ।আর তা তাদের সাথে যুদ্ধে উপনীত হওয়ার শামিল।তাছাড়া ধর্ষণের ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ করা হয়। ইসলামের আইন লঙ্ঘনে বল ব্যবহার করলেও এই শাস্তি প্রযোজ্য হবে।


ধর্ষণের ফলে মৃত্যুর শাস্তিঃ

ধর্ষণ কারণে হত্যাজনিত অপরাধ অনুষ্ঠিত হয় কিংবা ধর্ষণের শিকার কোনো লোক মৃত্যুবরণ করে তবে ঘাতকের একমাত্র শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড।


সহীহ হাদিসে ধর্ষণের শাস্তিঃ

১.হজরত ওয়াইল ইবনে হুজর(রা) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ(স) এর সময় এক নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে রাসুলুল্লাহ(স) ধর্ষককে হদের বা মৃত্যদন্ডের শাস্তি দেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) ধর্ষিতাকে কোনো শাস্তি দেননি ও চার মনুষ্য সাক্ষীর সাক্ষ্যও নেয়া হয়নি’(ইবনে মাজাহ)


সুতরাং ধর্ষণের ক্ষেত্রে ৪ জন সাক্ষীর প্রয়োজন নাই এবং ব্যভিচারের ন্যায় মেয়ে পুরুষ উভয়ের ওপর শাস্তি ব্যবহার করা হয় না।


২.আলকামা তাঁর জনক ওয়াযেল থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত মুহাম্মদ (সা) এর যুগে জনৈক ভদ্র মহিলা সালাত আদায়ের জন্য গমনকালে পথিমধ্যে তার সঙ্গে একজন পুরুষের দেখা হলে, সে লোক জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে। সে মহিলা চিৎকার দিলে, তার পাশ দিয়ে গমনকালে জনৈক মানুষ এর কারণ জানতে চায়। তখন সে মেয়ে বলেঃ অমুক ব্যক্তি আমার সঙ্গে এমন অকাজ করেছে। পরে তার পাশ দিয়ে মুহাজিরদের একটি দল গমনকালে সে ভদ্র মহিলা তাদের বলেঃ অমুক ব্যক্তি আমার সঙ্গে এমন কাজ করেছে। তারপর তারা গিয়ে এক ব্যক্তিকে ধরে আনে, যেটার সম্মন্ধে তাদের অনুমান ছিল যে, সে-ই এমন করেছে। অতঃপর তারা সে ব্যক্তিকে উক্ত নারীর নিকট উপস্থিত করলে, সেও বলেঃ হ্যাঁ। এ ব্যক্তিই করেছে। সেই সময় তাঁরা সে ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট নিয়ে যায়। হযরত মুহাম্মদ (সা) যখন সে ব্যক্তির উপর শরীআতের আদেশ জারী করার মনস্থ করেন, সেই সময় মহিলার সঙ্গে অপকর্মকারী লোক দাঁড়িয়ে যায় ও বলেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি এ অকাজ করেছি। তখন মুহাম্মদ সে নারীকে বলেনঃ তুমি চলে যাও, আল্লাহ্ তায়ালা তোমার গোনাহ মাফ করে দিয়েছেন। তারপর উনি (সা) ভুলভাবে ধরে আনা লোকটির সঙ্গে উত্তম ব‍্যবহার করেন এবং ধর্ষক ব্যক্তিটির জন্য বলেনঃ একে কঙ্কর মেরে হ*ত‍্যা কর।

যামী আল-তিরমিযি, ১৭:৩৭, সুনান আবু দাউদ, ৩৮:৪৩৬৬


মালিক নাফির কাছ হতে আমাকে ব্যাখা করেন যে, খুমুসের ক্রীতদাসদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে একজন দাস নিয়োজিত ছিল এবং সে একজন কৃতদাসীর ওপর ঐ মহিলার ইচ্ছার বিপক্ষে বল প্রয়োগ করল ও তাঁর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হল। ওমর ইবনুল খাত্তাব তাকে চাবুকপেটা করলেন ও তাকে বহিষ্কার বা নির্বাসিত করলেন ও তিনি দাসীটিকে চাবুকপেটা করলেন না কারণ ঐ নারীর ওপর বল প্রয়োগ করে জোর খাটান হয়েছিল।

এক্ষেত্রে চারজন সাক্ষী আনা হয়নি।

সহিহ বুখারী[৬],আল-মুয়াত্তা, ৪১ ৩.১৫


মালিক শিহাবের কাছ থেকে আমাকে বর্ণনা করেন যে আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান ধর্ষণের ১টি মীমাংসায় রায় দিলেন যে ধর্ষককে ধর্ষিত মহিলার জন্য মোহর দিতে হবে। ইয়াহিয়া বললেন যে তিনি মালিককে বলতে শুনেছেন, "আমাদের সম্প্রদায় যা করা হয় একজন পুরুষকে যে একজন নারীকে ধর্ষণ করে, হোক সে ঝি বা অকুমারী, যদি সে মুক্ত হয়, তাহলে অবশ্যই ঐ পুরুষকে ঐ নারীর জন্য মহিলাটির চাহিদা অনুযায়ী মোহর দিতে হবে। যদি সে একজন দাসী হয়, তাহলে অবশ্যই ঐ মহিলাকে এমন সমতুল্য কতিপয় দিতে হবে যা তাঁর অপমানিত মূল্যকে লাঘব করে। এরকম মামলায় হদ বা হুদুদ শাস্তি প্রয়োগ করা হবে, এবং ধর্ষিত মহিলাটির ওপর কোন শাস্তি প্রয়োগ করা হবে না। যদি ধর্ষকটি একজন কৃতদাস হয়, তাহলে উল্লিখিত দ্বায় তাঁর মালিকের ওপর বর্তাবে যদি না ঐ মালিক ঐ ক্রীতদাসটিকে আদালতের কাছে অর্পণ করে।"

আল-মুয়াত্তা, ৩৬ ১৬.১৪


ধর্ষিতার শাস্তি হবে নাঃ

হজরত ইবনে আব্বাস(রা) ব্যাখা করেন, রাসুলুল্লাহ(স) ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই খোদা আমার উম্মতের ভুলবশত করা অপরাধ, ভুলে যাওয়া কাজ ও বল প্রয়োগকৃত ব্যাপার ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ (ইবনে মাজাহ)


হজরত সাঈদ ইবনে জায়েদ(রা) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ(স) বলতে শুনেছি, ‘সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে যে মানুষ নিহত হয়েছে, সে শহিদ। জীবন রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সে শহিদ। দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সেও শহীদ। আর সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সেও শহিদ।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)


ইমাম মালিক বলেন, আমাদের মতে যে লোক কোন নারীকে ধর্ষণ করে, হোক সে মহিলা কন্যা কিংবা না, যদি সে একজন মুক্ত মেয়ে হয় তাকে অবশ্যই দাবি অনুযায়ী টাকা-পয়সা দিতে হবে, আর যদি ঐ ভদ্র মহিলা কোন দাসী হয়, কিন্তু তাকে নিশ্চয়ই এরূপ কয়েকটি দিতে হবে যা মাধ্যমে সে নিজের ওপর সংঘটিত উক্ত দুর্ঘটনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। ধার্য শাস্তি ধর্ষকের উপর প্রযুক্ত হবে ও যে ভদ্র মহিলা ধর্ষিত হয়েছে তাঁর জন্য কোন শাস্তি নেই, মামলা যাই হোক না কেন।

আল-মুয়াত্তা, ২/৭৩৪


চারজন সাক্ষীঃ

উপরের কোন ঘটনায় চারজন সাক্ষী আনা হয়নি। চারজন সাক্ষী ব্যভিচারের শাস্তি প্রদানে শর্ত ধর্ষণের শাস্তি প্রদানে নয়। মূলত তদন্ত করে ধর্ষক বের করা হবে। তবে বর্তমানে যেসব ডিজিটাল টেকনোলজি বিদ্যমান DNA Test বা আদার্স তা ধর্ষক গবেষণায় ব্যবহার করা যাবে।



সুতরাং ধর্ষণের শাস্তি ইসলামে মৃত্যুদন্ড। 


মুফতি ইমরান হোসাইন বাবুনগরী, সহকারী সম্পাদক, আল মুনাদিয়া

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন