AlMunadiyaPostAd

মালহামা কি? মহাযুদ্ধ মালহামা ও বাংলাদেশ, দাজ্জালের হাত থেকে বাঁচার গোপন উপায়

 


মালহামা হল ১টি যুদ্ধ। একটি অতিশয় কড়া এবং ভয়ঙ্কর মহাযুদ্ধ। আল মালাহীম হল পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একের অধিক যুদ্ধের সম্মীলনে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ। ১টি দীর্ঘমেয়াদী সংঘাত। যা বছরের পর বছর ধরে চলবে। এটা হল অনেকগুলো ছোট যুদ্ধের সম্মীলনে একটি বিশ্বজুড়ে লড়াই এবং রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, আল মালাহীম সংঘঠিত হবে মুসলিম আর রোমানদের মধ্যে। কারা এই “রোমান? রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম]-এর সময়ে “রোমান” বলতে কোন রাজনৈতিক সত্ত্বা বা শক্তিকে বোঝানো হতো না বরং একটি জাতিকে বোঝানো হতো সেই সময়ের রোমানরা ছিল – ইউরোপিয়ানরা সুতরাং “রোমান” নামটি প্রয়োগ-যোগ্য হবে ইউরোপ ও এর বর্ধিত অংশগুলোর জন্য জবাব আমেরিকা (আমেরিকা, কানাডা) এবং অস্ট্রেলিয়া। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলছেন রোমান ও মুসলিমদের ভিতরে একটি দীর্ঘমেয়াদী লড়াই চলবে, ও এর নাম আল মালাহীম ও এসব ঘটনাবলী সংঘঠনের সময়েই আল-মাহদীর উৎপত্তি ঘটবে ও ঈসা বিন মারইয়াম [আলাইহিস সালাম] অবতরন করবেন এবং দাজ্জালের উৎপত্তি ঘটবে। এসবই ঘটবে আল-মালাহীমের সময়। সুবহান’আল্লাহ, আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি পশ্চিমা বিশ্ব রোমানদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে এবং আল মালাহীমের জন্য নিজেদের রেডি করছে, আর মুসলিমরা এখনো ঘুমাচ্ছে, আলোচনা আর শান্তির গালগল্প আশ্বাস করে বিভ্রান্ত হচ্ছে।




ইউরোপীয়ানরা খ্রিস্টান ধর্মের ১টি বিকৃত রূপ পেয়েছিল। তাঁরা কখনোই ঈসা [আলাইহিস সালাম] – এর বিশুদ্ধ ধর্মে ঈমান আনেনি। তাঁরা প্রথমে ছিল মুশরিক আর তারপর তাঁরা খ্রিস্টান ধর্মের এরূপ একটি রূপের অনুসারী হয়ে গিয়েছে যা শিরক। পরিস্থিতি প্রাচ্যের খ্রিস্টানদের মতো না, যারা এক টাইম ঈসা [আঃ] সত্যিকার অনুসারী ছিল। দীর্ঘদিন ধরে তাওহীদের আলো হতে দূরে আধার ও অজ্ঞানতার ভিতরে ইউরোপ বসবাস করছে। ইউরোপিয়ানরা বুনিয়াদি ভাবে ১টি অধিক শান্তিপূর্ণ ধর্মকে নষ্ট করেছে। আমি খ্রিস্টান ধর্মের যেই বিকৃত রূপ তাঁরা ফলো করে তাঁর কথা বলছি যেটা অতিমাত্রা শান্তিপ্রিয় একটি রীতি “কেউ তোমার একগালে ঘা করলে তুমি অপর গাল পেতে দাও” [বাইবেলঃ ম্যাথিউ ৫:৩৮]। এর চাইতে বহু শান্তিপ্রিয় হওয়াতো সম্ভব না। আর আরব এবং প্রাচ্যের খ্রিস্টানরা এরকমটাই ছিলো, তাঁরা অতি শান্তিপ্রিয় ছিল। যদিও তাঁরা ইতিমধ্যেই ধর্মে ত্রিত্ববাদ এবং শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিলো। অথচ ইউরোপ, এই শান্তিপ্রিয় ধর্মের প্রকৃতিই বদলে দিয়েছে। খ্রিস্ট ধর্মকে জগতের ইতিহাসে সবচাইতে বেশি রক্তপাত ঘটানোর জন্য দায়ী ধর্মে পরিণত করার কৃতিত্ব ইউরোপীয়ানদেরই প্রাপ্য। সাম্প্রতিক বিশ্বের অন্তরে এমন কোন রীতি নাই যা মানুষ ইতিহাসে এ ধর্মের চাইতে অধিক রক্ত ঝরিয়েছে এবং এই সামঞ্জস্যপূর্ণ সংখ্যাগুলো নিজেরাই এর স্বপক্ষে ফৌজদারি ঘটনা সম্পর্কে (থানায়) প্রদত্ত বিবৃতি দেয়। ক্রুসেডের সময় কতো মুসলিমকে খ্রিষ্ট ধর্মের নামে করা হয়ছিলো? ইউরোপিয়ানদের নিজেদের আভ্যন্তরিক আইন যুদ্ধে কতো লোক মারা গিয়েছে? ইউরোপীয়ানদের ধর্ম যুদ্ধে শত শত লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে আর ইউরোপীয়ানরা এমন এক কাজে সাকসেস হয়ে গিয়েছে যা করতে আর কেউ উপযোগী হয়ে যায় নি, যে, তাঁরা তিনটি মহাদেশের আদি বাসিন্দাদের বিশ্বের বুক হতে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। জগতের ইতিহাসে এ জাতীয় কয়েকটি প্রথমে কক্ষনো ঘটেনি। তাঁরা উত্তর আমেরিকা, দক্ষিন আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার খাতিরে তাঁরা একান্ত নগণ্য সংখ্যক আদিবাসীদের বাঁচিয়ে রেখেছে আগের স্মারক হিসেবে আর বাকি সবাইকে শেষ করে দিয়েছে। আজ যেসব আদিবাসী এবং নেটিভ আমেরিকানরা বেচে আছে, সেটা হল গবেষণার স্বার্থে।


ইউরোপ এরূপ এক সত্ত্বা যা শয়তানের প্রস্তুতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবার যোগ্যতা রাখে। কারণ ইসলামের সঙ্গে সংঘাত করার জন্য শয়তান সবচাইতে খারাপদেরকেই খুঁজছে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] – এর হাদীস হতে আমরা জানতে পারি কিছু সুনির্দিষ্ট ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে এ দীর্ঘ যুদ্ধ শুরু হবে, যার শুরুতে মুসলিমরা থাকবে খুবই অসমর্থ আর এ লড়াই সম্পন্ন হবে মুসলিমদের মাধ্যমে একটানা দুনিয়া শাসিত হবার মাধ্যমে। এটা হবে সবচেয়ে মারাত্মক ফিতানের সময় আবার সেইম সঙ্গে সর্বাপেক্ষা অধিক বরকতময় সময়। এ সময়েই আল মাহদী এবং ঈসা [আলাইহিস সালাম] আসবেন ও এই সময়েই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। আজকাল একথাগুলোর অর্থ এ না যে সব রোমানরাই ইসলামের শত্রু হবে। কারণ ইসলাম দিন দিন মানুষের হৃদয় বিজয় করে নিচ্ছে। এ ব্যাপারটা খুবই কৌতুহল জ্ঞানের উন্মেষ যে যদিও রোমানরা মুসলিমদের বিপক্ষে যুদ্ধ করছে কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই ইসলাম ধারণ করছে এবং আমরা হাদীস হতে জানি রোমান আর্মি মুসলিমদেরকে ওইসব রোমানদের হস্তান্তর করতে বলবে যারা ইসলাম ধারণ করেছে ও মুসলিমরা বলবে, “আমরা কখনোই আমাদের ভাইদের তোমাদের হাতে তুলে দেবো না”। যদিও বর্ণ ও জাতীয়তা আরেক তবুও তাঁরা আমাদের ভাই, রিজন অধুনা তাঁরা মুসলিম এবং ইসলামের প্রতি আনুগত্য আরেক যেকোন পরিচয়ের চাইতে বহু গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘটনা সম্মন্ধে অগণিত হাদীস কথিত আছে। এবং এই বিষয়ে বুখারী ও মুসলিম শরীফে সাহীহ হাদীস কথিত আছে, উদাহরণসরূপ মুসলিম শরীফের ১টি হাদীস হলঃ রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- রোমানরা তোমাদের আক্রমণ করবে ও আস শামের আল আমাকে ডেরা খাটাবে (অবস্থান স্বীকার করবে)। মদিনা হতে একটি বাহিনী ওঁদের মোকাবেলা করতে যাবে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেন – “এবং তাঁরা হবে ওঁদের সময়কার শ্রেষ্ঠ মুমিন” ও এ মুসলিম বাহিনী অবস্থান স্বীকার করবে, ও রোমানরা বলবে – “ আমাদের লোকদের আমাদের হাতে তুলে দাও”, অর্থাৎ ওইসব রোমান যারা ইসলাম বরণ করেছে ও মুসলিমরা বলবে, “ আমরা কখনোই আমাদের ভাইদের তোমাদের হাতে তুলে দেবো না। সুতরাং উভয় টিম যুদ্ধ করবে, মুসলিম বাহিনীর এক-তৃতীয়াংশ হার করে পালিয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন – “আল্লাহ্‌ কখনোই ওঁদের তাওবাহ স্বীকার করবেন না”। জিহাদের ময়দান হতে পালিয়ে যাওয়া কবীরা গুনাহর ১টি [সাহীহ বুখারী – কিতাব ৫১, হাদীসঃ২৮]। জিহাদের ময়দান থেকে পালানো সাতটি কবীরা গুনাহর একটি। “আল মু’বিকাত– “মুবিক” অর্থ এমন কতিপয় যা অতীতের সব আমল বিনাশ করে দেয়। এইজন্য আপনি সারা জীবন আল্লাহ-র আনুগত্য করার পর যদি মাত্র ১টি যুদ্ধক্ষেত্র হতে পালিয়ে যান, তাহলে আপনি আপনার আগের আমল হারাবেন। সুতরাং আল্লাহ্‌ এই একতৃতীয়াংশের তাওবাহ কবুল করবেন না। “এবং এ বাহিনীর এক-তৃতীয়াংশ নিহত হবে, এবং তাঁরা হবে আল্লাহ-র কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদ” “এবং বাকি এক তৃতীয়াংশ বিজয় লাভ করবে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন – এই এক তৃতীয়াংশ জয় লাভ করবে ও কোন ফিতনাই তাঁদের দমাতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- “এবং তাঁরা অগ্রসর হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁরা কনস্টান্টিনোপল জয় করবে”। কনস্টান্টিনোপল হল ইস্তামবুল। অর্থাৎ ইস্তাম্বুল দু’বার বিজিত হবে। প্রথম ইস্তাম্বুল বিজিত হয়েছিলো মুহাম্মাদ আল ফাতীহ-এর সময় ও আবার বিজিত হবে, নব করে আল মালহামার সময়। অর্থাৎ আস শাম পর্যন্ত সব এলাকা রোমানদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ইতিমধ্যেই সেখানে পশ্চিমাদের আর্মি বেইস আছে। শুধুমাত্র সেখানেই না, সকল জায়গাতেই আর্মি বেইস ছড়িয়ে আছে। তো মুসলিমরা যখন কনস্টান্টিনোপল জয় করবে এবং গানীমাহ ভাগাভাগি করতে থাকবে। সেই সময় তাঁরা ১টি কন্ঠ শুনতে পাবে যা ঘোষণা করবে মাসীহ আদ-দাজ্জালের উদ্ভব ঘটেছে, এজন্য তাঁরা আবার আস শামে ফিরে যাবে ও সেখানে গিয়ে বুঝতে পারবে ঘোষণাটা ভিত্তিহীন ছিল। এটা হবে একটা ভিত্তিহীন গুজব। কিন্তু সেই সময় ঈসা বিন মারইয়াম [আলাইহিস সালাম] অবতরন করবেন ও এই সময়েই আদ-দাজ্জাল আবির্ভূত হবে এবং ঈসা [আলাইহিস সালাম] ব্যক্তিগত হাতে ওনাকে খুন করবেন [সাহীহ মুসলিম, কিতাব ৪, হাদীস নং ৬৯২৪]।



এটা হল, কনস্টান্টিনোপল বিজয়, দাজ্জালের উৎপত্তি ও ঈসা বিন মারইয়াম [আলাইহিস সালাম] এর অবতরন সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি হাদীস। একই রকম আরেকটি হাদীস বিদ্যমান যা এটার সঙ্গে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। ৩য় আরেকটি হাদীস হল, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- “একটা টাইম আসবে যখন ইরাক চারদিক থেকে অবরুদ্ধ হবে ও অবরোধকারীরা কোন টাকা-পয়সা বা আহার ইরাকের অভ্যন্তরে ঢুকতে দেবে না”। সাহাবারা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “এই লোকেরা কারা যারা ইরাক অবরোধ করবে?” রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বললেন- “আল আযম”। আল আযম বলতে অমুসলিম, অনারবদের বোঝানো হয়, আল-আযম – হল তাঁরা যারা আরবী বলতে পারে না। সুতরাং অনারবরা এই নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ জারি করবে ও রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- “এবং এরপর আস-শাম”…সিরিয়া, জর্ডান, ফিলিস্তিন ও লেবানন আস-শামের অন্তর্ভুক্ত ও এর কেন্দ্র হল জেরুসালেম, ফিলিস্তিন, এটাই হল আস শামের কেন্দ্রবিন্দু। ভুলবশত আস শামকে শুধুমাত্র সিরিয়া হিসেবে অনুবাদ করা হয়, তা সত্ত্বেও এই অবিরাম অঞ্চলটা মিলে আস শাম, ও এর কেন্দ্রে আল কুদস। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- আস শাম ১টি অবরোধ এর মধ্যে কর্তৃক যাবে। যার ফলে কোন আহার কিংবা টাকা-পয়সা সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। সুতরাং সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন – “ এর জন্য কারা দায়ী হবে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] উত্তর দিলেন – “আর রুম” – রোমানরা। ও অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বললেন – আমার উম্মাহর মধ্যে একজন খলীফা থাকবে যে মেজারমেন্ট ছাড়াই মানুষের মাঝে অর্থ-সম্পদ বিলিয়ে দেবে। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, আর রুমের আলোচনায় কিসের জন্য আমি এ হাদিসটি বর্ণনা করছি। রিজন হল, প্রথমত এ মুহুর্তে ইরাক ১টি নিষেধাজ্ঞা এর মধ্য দ্বারা যাচ্ছে। এই অবরোধ জারি করেছে জাতিসংঘ। অর্থাৎ এর জন্য কেবল রোমানরা দায়ী না, দায়ী সবাই। তবুও তারপরেই রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন – “আস শামের উপর অন্য কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে” ও এটা করবে রোমানরা। প্রচুর উলামা রয়েছেন যারা মনে করেন, ইরাকের বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ হল আল মালহীমের সূচনার ভূমিকা, রিজন এর শুরুটা হয়েছে ইরাকের দ্বারা ও তারপর এটা সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হবে, এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি আমরা আল মালাহীম নামের এ যুদ্ধগুলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আল্লাহু আলাম, এ সবই অনুমান, আমরা এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে কতিপয় বলতে পারবো না। কিন্তু ইরাকে অধুনা যা হলো সেটা নিয়ে প্রত্যেক মুসলিমের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, রিজন এটাই হয়তোবা উম্মাহর জন্য একটি অতি কঠিন এক্সামের শুরু, এটি ভাববেন না এটা আরমে কোন ভ্রমণ হবে। প্রত্যেক প্রজন্মকেই কোন না কোন বিপর্যয় লঙ্ঘন করতে হয়।


প্রতিটি প্রজন্মের ক্ষেত্রেই এটি ঘটে, অথচ কোনো সময়েই কোনো সময়েই আপনি একমাত্র দর্শক ভূমিকায় থাকেন ও অন্য কেউ অ্যাকটিভ অবদান পালন করে। আমাদের বাপ-দাদারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করছেন তবুও তাঁরা এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেনেনি। তাঁরা মাঠের বাইরে হতে এ যুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ করেছেন। অতঃপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হল এবং আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম এই যুদ্ধের দ্রষ্টা হলেও তাঁরা এর মাধ্যমে সরাসরি ভাবে প্রভাবিত হন নি। অথচ আজকাল আমারা যেই অবস্থায় প্রবেশ করছি তাতে মৌলিক ভূমিকা পালন করতে হবে মুসলিমদেরকেই। এর প্রথমে মুসলিমদের অবদান ছিল নীরব দর্শকের অথচ সম্প্রতি মুসলিমরা এই সঙ্ঘাতের একদম ১ম সারিতে অবস্থান করছে। প্রথমে তাঁরা শুধুমাত্র হাত গুটিয়ে দেখছিলো, কিন্তু বর্তমান মুসলিমরাই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ করছে। সুতরাং ভবিষ্যতে যাই ঘটুক না কিশের জন্য সেটা আমাদের ওপর সরাসরি ভাবে প্রভাব ফেলবে, কারণ ফিউচারের সব ঘটনাবলীই ঘটবে মুসলিম উম্মাহকে কেন্দ্র করে। সব কিছুর কেন্দ্রে থাকবে মুসলিম ভূখণ্ডগুলো। আপনার যারা সেসময় খোজ-খবর দেখেছেন তাঁদের মনে থাকার কথা, আজ হতে পনেরো–বিশ বছর আগে কালে ভদ্রে ইসলাম পক্ষান্তরে মুসলিমরা নিউজের শিরোনাম হতো। আর আজ দেখুন শুরু হতে সমাপ্ত পর্যন্ত, কোন না কোন ভাবে খবরে কেবল ইসলাম এবং মুসলিমদের কথাই আলোচিত হচ্ছে। সেটা বেশ ভালো বার্তা হোক কিংবা খারাপ। কারণ বর্তমান আমারা ঘটনাপ্রবাহের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছি, অতএব যাই ঘটুক না কিসের জন্য তা আমাদের ওপর ইফেক্ট ফেলবে। ইদানিং এই আন্দাজ যদি আসলেই হয়, যে মুসলিম উম্মাহ তাঁর ইতিহাসের ১টি মহা তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করছে। এরূপ এক অধ্যায় যেটার ঠিক পরেই আগমন ঘটবে উম্মাহর ২য় স্বর্ণযুগের। তাহলে আপনার, আমার সকলের শিওর করতে হবে আমরা যেন মাঠের বাইরে নিস্ক্রিয়ভাবে না বসে থেকে, আসল ঘটনাপ্রবাহের একেবারে কেন্দ্রে সক্রিয় অবদান পালন করি। কেন? কেন সাহাবারা সবচাইতে সম্মানিত ও ইম্পোর্টেন্ট প্রজন্ম?



সাহাবারা সম্মানিত ও সর্বাপেক্ষা অসাধারণ প্রজন্ম, কারণ তারাই সেই প্রজন্ম যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যখন তাবেঈনরা আসলেন সেই সময় জন্য ইতিমধ্যেই সবকিছু প্রস্তুত ছিলো। ফলে তাঁরা ইলম শিক্ষা করা ও দেওয়ার প্রতি মনোনিবেশ করতে পেরেছিলেন। সাহাবারা অথচ এই বিলাসিতার চান্স পান নি। সাহাবাদের দিন কেটেছিল এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে, এক দুর্দশা থেকে আরেক দুর্দশার মোকাবেলায়। সাহাবাদের আজব বৈশিষ্ট্য হল, তাঁরা ছিলেন সংখ্যালঘু যারা স্রোতের অপরদিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাবেঈনরা স্রোতের বিপরীতে যেতে হয়ে যায় নি, অথচ সাহাবাদের স্রোতের বিপরীত দিকে সংঘাত করতে হয়েছিলো। সকল কিছু, সারা দুনিয়া সাহাবাদের বিরুদ্ধে ছিল, এমনও সময় ছিল যে সাহাবারা কামরার বাইরে যেতে আতঙ্কিত বোধ করতেন, যেমন খন্দকের যুদ্ধের সময় এইরকম অবস্থা হয়েছিলো। সাহাবারা স্বতন্ত্র কারণ তারাই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিলেন। অধুনা সাহাবাদের প্রস্তুত সেই আলয় ভেঙ্গে গেছে। এইজন্য আজ নিউ এক প্রজন্মের সামনে চান্স বিদ্যমান এই আলয় পুনঃনির্মাণের। এইজন্য আমাদের প্রজন্মের সামনে চান্স আছে আমলের পক্ষ দিয়ে সাহাবা কেরাম [রাঃ] –এর সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রজন্ম হবার।


রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] ১টি হাদীসে বলেছেন- রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, মুসনাদ ইমাম আহমেদ [হাদীস ১/৩৩৩] এবং আত তাবারানী আল মুজাম আল কাবীর [১১০২৯] এ উক্ত হয়েছে, “ইয়েমেনের আদ’আন আব’ইয়ান থেকে বারো হাজার সৈন্যর উন্নতিশীল ঘটবে, তাঁরা পরিমাণে হবে ১২,০০০”। রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, “তাঁরা আমার ও তাঁদের মাঝামাঝি সব লোকের মধ্যে শ্রেষ্ঠ”। অর্থাৎ ইসলামের সম্পূর্ণ ইতিহাসে এই প্রজন্ম হবে সাহাবা [রাঃ]-এর পরেই সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এই প্রজন্ম হবে অত্যন্ত সম্মানিত ও ইম্পোর্টেন্ট এক প্রজন্ম। তাঁরা হবে উম্মাহর উত্তম সন্তান, কারন রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন – মুসনাদে আহমাদ [৩/১৩০], আত-তীরমীযী [হাদীস নং ২৮৭৩] এবং আহমাদ [৪/৩১৯] –এ কথিত হয়েছে, “আমার উম্মাহ বৃষ্টির মতো, তুমি জানবে না এটা আঝোরে কোন সময় ঝরবে, হোক তা চালু অথবা শেষ”।


এই উম্মাহর শুরু হয়েছিলো রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম]-কে দ্বারা এবং এই উম্মাহর সম্পন্ন হবে ঈসা [আলাইহিস সালাম]-কে সঙ্গে নিয়ে। সুতরাং আপনি যদি এ ঘটনাপ্রবাহে অংশগ্রহনের কোন চান্স পান, তাহলে নিজে ব্যাক্তিগতভাবে এতে ভাগ নিন, এবং আপনার সন্তানকে এজন্য প্রস্তুত করুন। আপনি অথবা আপনার পরের প্রজন্ম যদি এ স্বর্ণযুগের অংশ হতে চায়, তাহলে আপনার কর্তব্য এটি নিশ্চিত করা যে আপনারা ময়দানের একেবারে মাঝখানে আছেন। আপনি নিশ্চয় চাইবেন না মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা নিস্ক্রিয় ভিউয়ার্স হতে। সুতরাং আজকের সব মুসলিম, বিশেষ করে তরুণদের জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি যেন তাঁরা নিজেদের ফিউচারের জন্য প্রস্তুত করে। আল্লাহ্‌ আপনার নিকট যে কোরবানি দাবী করবেন, আপনি তাঁর জন্য তৈরী থাকুন। আমরা কোন সাধারণ সময়ে বসবাস করছি না। এটি একটা তাজ্জব এবং মহাগুরুত্ববহ যুগ। এবং এ সাংঘাতিক ঘটনাগুলোতে হয় আপনি কিংবা আপনার পরের প্রজন্ম অংশগ্রহণ করবে। ও একারণে আল্লাহ-র দিক হতে মহাপুরষ্কার সম্প্রদান করা হবে, একারণে আপনি যেন এ পুরষ্কারের ভাগীদার হতে পারেন সেটা নিশ্চিত করুন। এটা শিওর করুন আপনি যেন এ পুরষ্কারের একটা ভাগ হলেও পান। একবার চিন্তা করে দেখুন, আপনার সামনেই এসব চলছে অথচ আপনি এতে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না – এর চাইতে বড়ো অপব্যয় এর কি হতে পারে ?আপনি কি বরকতয় স্বর্ণযুগে বেচে থাকার চান্স পাওয়া সত্ত্বেও হাত গুটীয়ে মাঠের বাইরে বসে থাকবেন? চিন্তা করে দেখুন যারা পরবর্তী দিকে ইসলাম করেছিলেন সেই সাহাবারা কি রকম অনুতাপ করতেন, রিজন তাঁরা আরো আগে ইসলাম গ্রহণ করেন নি। তাঁরা কিসের জন্য একদিন প্রথমে মুসলিম হলেন না, তাঁরা এটা নিয়ে পর্যন্ত পরিতাপ করতেন। আবারো বলছি এটি অনুমান, তা সত্ত্বেও যদি এক শতাংশ সম্ভাবনাও থাকে এ জাতীয় ঘটার তাহলে আপনি এই সুযোগ হারানোর ঝুকি নিতে চাইবেন না। আর এ দিনগুলোর জন্য পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য আপনার কি কি প্রয়োজন? দুটো জিনিসঃ ১। থাবা’ত এবং ২। তাযকীয়া


প্রথমত। দৃঢ়সংকল্পতা


আপনাকে পর্বতের মতো দৃঢ় থেকে হবে। কোন কিছুই যেন আপনাকে নড়াতে, বদলাতে না পারে। আপনার ঈমান শক্ত হতে হবে যেটার শেকড় আপনার হৃদয়ের নিবিড়ে প্রোথিত। এটি হল এক নম্বর। কারণ এক্ষেত্রে পুরষ্কার যতো বড়ো, ফিতান এবং এর হতে ঝুঁকিও ততোটাই মারাত্মক। বিষয়টি বিজনেসের মতো, অতিশয় লাভজনক ব্যবসাগুলোতে ঝুকির হারও বহু হয়। অর্থাৎ একদিকে যেমন প্রচুর লাভের সম্ভাবনা থাকে তেমনিভাবে প্রচুর অর্থ হারাবারও ঝুঁকি থাকে। সুতরাং আপনি পর্যাপ্ত ‘আযর [পুরষ্কার] পেতে পারেন, অথচ আপনি যদি ভ্রান্তি করেন তবে তাঁর জন্য মারাত্মক মাশুল দেওয়ার জন্য হবে।


দ্বিতীয়ত। আপনার যা প্রয়োজন হবে তা হল, তাযকীয়া


আত্মত্যাগের স্পৃহা। আল্লাহ্‌-র জন্য যাই প্রয়োজন তা ত্যাগ করার জন্য আপনার রেডি থেকে হবে। এটা থেকে পারে আপনার নিজের জীবন, আপনার সময়, সম্পদ, পরিজন থেকে পারে আপনি যেই ইসলামী টিমের মেম্বার সেটা আপনাকে ছেড়ে করতে হবে থেকে পারে যে উলেমাদের আপনি ভালোবাসেন তাঁদের ত্যাগ করতে হচ্ছে। যেকোন কিছু ঘটতে পারে। আপনি জানেন না কি ঘটবে। রিজন এটি হল এমন এক টাইম যখন একজন মানুষ প্রভাতে বিশ্বস্ত থাকবে তা সত্ত্বেও রাত থেকে থেকে কাফিরে রুপান্তর হবে। সে মুসলিম হিসেবে ঘুমাতে যাবে অথচ জেগে উঠবে মুশরিক হিসেবে। এজন্য কিছুকেই নিশ্চিত হিসেবে ধরে নেয়া যাবে না। আল্লাহ্‌ আপনার নিকট যা চান সেটি সম্প্রদান করার জন্য আপনাকে রেডি থাকতে হবে। নিজেকে আল্লাহ-র পথের একজন সহযোগী হিসেবে ভাবতে শিখুন, আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করবেন, আর ফলাফল আল্লাহ্‌-র হাতে ত্যাগ দেবেন। এবং আপনার রব’ আপনার কাছে যাই চাইবেন, আপনি সেটা দিতে রেডি থাকবেন। আমি এটি বলছি কারণ আত্মত্যাগ পর্যাপ্ত ক্ষেত্রেই শুধু দুনিয়াবী বস্তু উদাহরণসরূপ –সময়, অর্থ, সম্পদের মধ্যে আবদ্ধ থাকে না। এমনো থেকে পারে যে আপনার শেইখ,তিনি যেই হোন, ভ্রান্তি পথে আছেন। এইরকম হলে, আপনি কি তাঁর অনুসরণ করবেন? নাকি আপনি আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যা বলেছেন সেটির অনুসরণ করবেন? এইজন্য এই দুরূহ টাইমে আমাদের যা চাই তা হল, নূর – যা আমাদের অন্ধকারের মধ্যে পথ দেখাবে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, কিতাব আল ফিতান ওয়া আল মালাহীম, সুনান আবু দাউদ, কিতাব ৩৫, নম্বর ৪২৪৬ –এ, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম], এই ফিতানকে নিবিড় রাতের ঘোরতর অন্ধকারের সাথে তুলনা করেছেন। এ ফিতানের আধার এতো ঘন যে আপনি কিছু দেখতে পেয়ে যাবেন না। তাহলে কেমনে আপনি এর মাঝে হাটবেন? কিভাবে সুদীর্ঘ উপায় পাড়ি দেবেন? এ অবস্থায় ঠিক পক্ষ নির্দেশনা জন্য আপনার অন্তরে ঈমানের আলো থাকতে হবে। ও আপনার অন্তরে এই আলো প্রস্তুত করার পথ হল, আজ থেকেই আপনার ঈমানকে সুদৃঢ় করার জন্য কাজ আরম্ভ করা। রিজন আমাদের সবাইকে পর্যাপ্ত ছলনা এবং মিথ্যাচারের মুখোমুখি থেকে হবে, এজন্যই ইহাকে “ফিতনা” হয়। ফিতনা যখন আসে, সেই সময় সবকিছু অত্যন্ত ঝাপসা, অস্পস্ট ও কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে, আর যখন ফিতনা দূর হয়ে যায় তখন সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে যায়। কিন্তু ততোক্ষনে প্রচুর দেরী হয়ে গেছে, সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও যতোক্ষন ফিতনা রয়েছে থাকে ততোক্ষণ কোন কতিপয় পরিষ্কার নোটিশ পসিবল হয়ে যায় না। তাই আপনার বুকে ঈমানের আলো, আল্লাহ-র পক্ষ থেকে নূর থাকতে হবে।





তাই ভাই-বোনেরা আপনারা প্রিপারেশন নিন, নিজেদের তৈরী করুন, যত্নশীল হোন। কোন কিছুকেই শিওর হিসেবে ধরে নিবেন না। দৈনন্দিন জীবনের আরাম-আয়েশে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন না। নিজেকে প্রস্তুত করুন। যে সময় আসছে তাঁর জন্য নিজেকে রেডি করুন, বিশেষ করে ঈমানের পক্ষ দিয়ে, রিজন আপনি যদি ভাবে এই ঘটনাবলীর দর্শনকারী নাও হন, আজ হল সেই সময় যখন উম্মাহ বিশ্বমঞ্চের কেন্দ্রে অবস্থান করছে । সুতরাং আজকাল দুনিয়াতে যাই চলছে সেটা কোন না কোন ভাবে আমাদের উপর ইফেক্ট ফেলবে এবং এই বিপর্যয়ের সময় আপনার সুদীর্ঘ উপায় পাড়ি দেওয়ার জন্য রেডি থাকতে হবে। রিজন এমনো সিচুয়েশন নোটিশ দেওয়ার জন্য পারে যে আপনার আশেপাশেও কেউই সত্যের পথে আগুয়ান থেকে রাজী না, একা পথচলার মতো দৃঢ়তা এবং সক্ষমতা আপনার অর্জন করতে হবে।


আমরা যখন ফিতনার সময়ের আগেই পরিকল্পনা নেওয়ার কথা ভাবছি তখন আমরা দৃষ্টান্ত হিসেবে সিয়ামের কথা ধ্যান করতে পারি। ফাযরের আযানের পূর্বেই আমাদের সাহরী খেতে হয়। মুয়াজ্জিন “আল্লাহু আকবার” বলা মাত্র সময় শেষ। একারণে ফজরের আগে যদি আপনি সাহরী না খান [প্রস্তুত না হন] তাহলে একবার ফিতনা চালু হয়ে গেলে আপনার ক্ষুধার্ত থাকতে হবে। তাই সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে তাড়াতাড়ি সাহরী খেয়ে নিন। কুর’আনে আল্লাহ্‌ আযযা ওয়াজাল বলেছেন, “যেদিন আপনার পালনকর্তার কোন নমুনা আসবে, সেদিন এমন কোন ব্যক্তির বিশ্বাস স্থাপন তার জন্য ফলপ্রসূ হবে না, যে পূর্বকাল হতে আশ্বাস স্থাপন করেনি অথবা স্বীয় আস্থা অনুযায়ী কোনরূপ ভালো কর্ম করেনি। আপনি বলা হয় দিন, অপেক্ষা করো, আমরাও অপেক্ষমান”। (সূরা আন’আম ১৫৮) আল্লাহ্‌র চিহ্নসমূহ যখন প্রকাশিত হয়ে যাবে তখন ঈমান এনে কারো লাভ হবে না, যদি না সে আগেই ঈমান এনে থাকে এবং পূণ্যকর্ম করে। আপনি যদি আগেই ইমান না এনে থাকেন তাহলে ফিতানের সময় উপস্থিত হলে আপনি ঈমান আনতে পারবেন না, কারণ ততক্ষনে প্রচুর বহু দেরী হয়ে যাবে। শুধুমাত্র ঈমান আনার পরেই আপনি এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও অগ্রসর থেকে পারবেন। সুতরাং আগামীকালের জন্য অপেক্ষায় না থেকে এখনী আপনার সাহরি বরণ করুন।


আল মালাহীমের সঙ্গে রিলেটেড পরবর্তী চিহ্ন হল, কিতালুল ইয়াহুদঃ মুসলিম ও আল ইয়াহুদের মধ্যে যুদ্ধ। ইস্রাইল রাস্ট্রের প্রতিষ্ঠার দ্বারা এই সংঘর্ষের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপিত হয়ে গিয়েছে সাহাবাদের এই বিষয়টি বুঝতে দুঃখ হয়েছিলো। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন [আল হায়তামী, মাজমা আল যাওয়াইদভুল এবং ইবনে হাজর আল আসকালানী] “আল ইয়াহুদের সঙ্গে তোমাদের ১টি সংঘাত হবে, তোমরা জর্ডান নদির পশ্চিম পাড়ে থাকবে আর ইয়াহুদরা থাকবে নদীর পূর্ব পাশে”। সাহাবাদের এ হাদিসটি বুঝতে প্রবলেম হচ্ছিলো, কারণ সেই সময় ইহুদীরা শক্তিশালী ছিলো না আর তখন মুসলিমরা জর্ডান পর্যন্ত পৌঁছেনি। একারণে জর্ডানে তখন কোন মুসলিম ছিল না। হাদিসটির বর্ণনাকারী বলেছেন, জর্ডান দরিয়া কোথায় আমি তাই জানতাম না। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম], এমন ঘটনার কথা বলছিলেন যেই ঘটনার সংঘটনের জায়গার নামই আমরা জানতাম না। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- এই জায়গায় [জর্ডান নদী] তোমরা যুদ্ধ করবে। ইন শা আল্লাহ্‌, ইস্রাইল, “বৃহত্তর ইস্রাইল” গঠনে ব্যর্থ হবে।আজ যে সীমানা রয়েছে তাঁরা এর চাইতে বেশি আর আগুয়ান হতে পারবে না। কারণ আজকাল তাঁদের সীমান্ত একেবারে জর্ডান নদীর তীরে এবং এখানেই যুদ্ধ সংঘটিত হবে ও এ যুদ্ধের ফল হবে আন নাসর লিল মুমীনীন মুমিনরা জয় লাভ করবে। এই হাদীসে আরো ১টি ব্যাপার উল্লেখিত রয়েছে যা বেশ কৌতুহলউদ্দীপক। এটি হবে এরূপ এক লড়াই যা এজাহার দেবে শুধুমাত্র যারা সংঘাত করছে তারাই না, এমনকি প্রকৃতিও এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। বৃক্ষ ও শিলা মুসলিমকে ডেকে বলবে “আমার পেছনে এক ইহুদী চুরি করে আছে…”। এ গাছ ও পাথরগুলো যখন মুসলিমদের ডাকবে তখন তাঁরা আমাদের কি বলা হয় সম্বোধন করবে? তাঁরা কি বলবে – “হে ফিলিস্তিনি’? অথবা “হে মিশরী”? বা “হে পাকিস্তানী ? – তাঁরা কি বলবে? তাঁরা বলবে “হে মুসলিম!” পাথরও জানবে আপনি মুসলিম অথচ আপনি কোন রাষ্ট্র হতে এসেছেন সেটা সে জানবে না। কারণ সে শুধুমাত্র ঈমানকেই চিনতে পারবে।


সুতরাং যে লড়াই “লা ইলাহা ইল্লাললাহ-র পতাকার নিম্নদেশে হয়ে যায় না, সেই যুদ্ধ ব্যর্থ। বিজয় তখনই আসবে যখন এটা পরিষ্কার হবে যে আল্লাহ্‌ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই ও ক্লিয়ার হবে যে আপনার একমাত্র ইন্ট্রোডিউস হল, আপনি একজন মুসলিম, একমাত্র তখনই মুসলিমরা বিজয় অর্জন করবে।


মুফতি ইমরান হোসাইন বাবুনগরী, সহকারী সম্পাদক, আল মুনাদিয়া

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন