AlMunadiyaPostAd

ইসলামে জানানো হয়েছে প্রেম করো..চুটিয়ে প্রেম করো..এককথায় মন দিয়ে প্রেম করো..


ইসলামে জানানো হয়েছে প্রেম করো। চুটিয়ে প্রেম করো। দুজন খেতে বসলে একে অপরের মুখে লোকমা তুলে দাও। মাঝে মাঝে গিফট দাও উপহার দাও। তার সাথে ছোট-গল্প কর। ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখো। মাঝে মাঝে দুষ্টুমিও করতে পারো। এককথায় মন দিয়ে প্রেম করো।

যদি এরূপ প্রেম করো তবে সাওয়াব/নেকী হবে। না করলে গুনাহও থেকে পারে। সাবধান থাকবেন কিন্তু।


কিন্তু এই প্রেমের শর্ত রয়েছে :

প্রথমে আপনাকে বিবাহ করতে হবে। আর তার পরই আপনি এ প্রেমের চান্স পাবেন। আপনার স্বামী/স্ত্রীর সাথে।

আপনি ভেবে অবাক হবেন যে বিয়ের পর প্রেম করলে মন থেকে এক অলৌকিক ভালো লাগা জন্মায়। সবসময় মনে এক ভালো লাগা অনুভূত হয়। মন পবিত্র থাকে। আপনার নিজের জীবন সাথী কে অনেক ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।

অপর দিকে বিয়ের প্রথমে যদি প্রেম করেন তাহলে সবসমই একটা দুশ্চিন্তা বিদ‍্যমান থাকে। কেউ দেখে ফেলল কি না। বাড়িতে জানা জানি হলে অশান্তির সমাপ্তি থাকবে না। ভবিষ্যৎ এ কি হবে। যদি রিলেশন গভীরে চলে যায় তাহলে তো আরো ভয়ানক। শেষে যদি দুজন দুজনকে না পান। পরে যার সাথে বিয়ে হবে তাকে ভালোবাসতে পারবেন। আর না যাকে এতদিন অন্যায় ভাবে ভালোবেসেছেন তাকে পাবেন। সারা জীবন কোথাও একটা শূন্যস্থান থেকেই যাবে।

আসলে ইসলাম এইরকমই এক জীবন ব্যবস্থা যা আমাদের এক সুস্থ ও পবিত্র সমাজ উপহার দেয়।

আমরা এগুলো লক্ষ করি না।


রাসূল সাঃ ছিলেন খুবই রোমান্টিক একজন প্রেমিক, তবে স্বামী হিসেবে।

চলুন সহীহ হাদিস থেকে তার ভালোবাসার কয়েকটি গল্প শুনে নেই 😊

স্ত্রীদেরকে ভালোবাসার কথা অকপটে জানাতেন। রাতের বেলা আয়েশা (রাঃ) কে নিয়ে ঘুরতে বের হতেন। দুজন মিলে গল্প করতেন । দু’জন একসাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন। হেরে গেলে পরেরবার আয়েশা রাঃ কে হারিয়ে তার প্রতিশোধ নিতেন।।

ভেবেছেন? স্ত্রীর সাথে হেটে হেটে গল্প করেছেন দৌড় দিয়েছেন, তবুও আবার রাতের বেলায় 🙂 কতটা রোমান্টিক ???

আয়েশা (রাঃ) পাত্রের যে পক্ষ হতে পান করতেন উনিও ওই স্থান থেকে পান করতেন। আয়েশা রাঃ হাড্ডির যে জায়গা হতে কামড় দিয়ে খেতেন, উনি সেই জায়গা থেকেই কামড় দিয়ে খেতেন।

কতটা রোমান্টিক হলে এ কাজ উনি করেছেন, ভাবুন তো 🙂


একবার হাবশিরা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলছিল। রাসূল (সাঃ) আয়েশা (রাঃ) কে চাদর দ্বারা ঢেকে দিলেন। অতঃপর আয়েশা (রাঃ) সে খেলাধুলা দেখতে থাকেন রাসূল (সাঃ) এর কাঁধ ও কানের মধ্যে দিয়ে। আয়েশা (রাঃ) যে খেলা দেখা অতিশয় উপভোগ করছিলেন, তা কিন্তু না। উনি দেখতে চাইলেন রাসূল (সাঃ) কতক্ষণ তার জন্য এভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। একসময় আয়েশা (রাঃ) ই ধৈর্য্য হারিয়ে চলে গেলেন।

ভেবেছেন কখনো? স্বামীর কাধ ও কানের মাঝে মাথা গুজে খেলা দেখা, কতটা কেয়ারিং ছিলেন, রাসূল (সাঃ) 😊

আরেকবার আয়েশা (রাঃ )ওনাকে বড় এক গল্প বলা শুরু করলেন। উনি ধৈর্য্য ধরে পুরো গল্পটা শুনে গেলেন। কেবল এতোটুকুই না, গল্প নিয়ে সুন্দর মন্তব্যও করলেন।

কত রোমান্টিক হলে স্ত্রীর সাথে গল্প-আড্ডায় মন দিতেন, মাঝে মাঝে গল্প নিয়ে প্রশ্ন ও মন্তব্যও করতেন ☺

মৃত্যুর ঠিক আগ মুহুর্তে আয়েশা রাঃ) এর ব্যবহার করা মিসওয়াক উনি ব্যবহার করেছিলেন। দু'জনের লালা এক হয়ে গিয়েছিল। আর আয়শা (রাঃ) এর কোলে মাথা রেখেই তিনি আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রত্যাবর্তন করেন।

কতটা মহাব্বাত থাকলে, এক মেসওয়াক দুজন ব্যবহার করতেন? বর্তমানে তো স্বামী স্ত্রী এক বোতলে পানিও পান করে না। আপনি রোমান্টিকতা খুজলে রাসুল (সাঃ) এর দিকে তাকান 🙂

স্ত্রীদেরকে আদর করে ছোট ছোট নামে ডাকতেন তিনি। কখনো কখনো ভালোবেসে আলাদা একটা নামই দিয়ে দিতেন।

আয়েশা (রাঃ) কে ভালোবেসে ডাকতেন ‘হুমাইয়ারা’ (লাল-সুন্দরী) নামে। আয়েশা (রাঃ) কখনোই জন্মদাত্রী হতে পারেননি। এজন্য যখন তার বোন ১টি ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন, তখন রাসূল সাঃ বললেন, “ছেলেটার নাম হবে ‘আব্দুল্লাহ’। আর আজ হতে তুমি হচ্ছো 'উম্মে আব্দুল্লাহ' (আব্দুল্লাহর মা)।" সবাই তারপর থেকে আয়েশা (রাঃ) কে 'উম্মে আব্দুল্লাহ' নামেই ডাকত। পৃথিবীতে অনেকেই তাদের স্ত্রীকে যত্ন করে 'ময়না-পাখি', 'জানু'- এসব নামে ডেকে থাকেন। তারা হয়তো-বা জানেনও না যে, নিজের অজান্তেই তারা রাসূল (সাঃ) এর একটি সুন্নাহ ফলো করছেন।

ভেবেছেন কি? সেই যুগে এমন রোমান্টিকতার অবতারণা করে গিয়েছেন নবী (সাঃ)!! ☺


সাফিয়া( রাঃ) ছিলেন খাটো গড়নের। একারণে যখন উনি বাহনে আরোহণ করতেন সেই সময় রাসূল সাঃ তাকে ঢেকে দিতেন। তারপর হাঁটু বিছিয়ে দিতেন। সাফিয়া রাঃ সেই হাঁটুতে পা দিয়ে বাহনে আরোহন করতেন। প্রত্যেক স্ত্রীই তাঁর নিকট ছিলেন রাণীর মতো। একজন রাণী ভূপতির কাছ থেকে যতোটা গুরুত্ব পান, তাঁর স্ত্রীরা তার চেয়েও অধিক সম্মান পেতেন।

ভেবেছেন কি?? স্বামীর হাটুঁতে ভর দিয়ে, বাহনে উঠেছেন!! এরকম রোমান্টিক ব্যক্তি কয়জন পাবেন? এত্ত ভালোবাসা কই পাবেন??


প্রিয়তমাদের অনুভূতির দিকেও রাসূল (সাঃ) প্রখর দৃষ্টি রাখতেন। নিজের জীবনে দুঃখ-কষ্টের কোন সমাপ্তি ছিল না, তারপরেও স্ত্রীদের দুঃখ তায দৃষ্টি গোছড় হতো না। একবার আয়েশা (রাঃ) কে রাসুল (সাঃ) বললেন, “আয়েশা! তুমি কোন সময় আমার উপর সন্তুষ্ট হও, আর কখন অভিমান করো, আমি কিন্তু তা ঠিকই বুঝতে পারি।” আয়েশা রাঃ বিস্মিত হয়ে জানতে চাইলেন, “কীভাবে আপনি তা বোঝেন?” রাসূল (সাঃ) বললেন, “যখন আমার উপরে সন্তুষ্ট থাকো, সেই সময় তুমি বলো, 'এমন নয়; মুহাম্মাদের রবের কসম।' আর যখন কোন কারণে রাগ করো, সেই সময় বলো, ‘এমন হয়; ইব্রাহীমের রবের কসম।’

স্ত্রী কোন সময় অভিমান করতেন সেদিকেও উনি খেয়াল রাখতেন, এই যুগের কয়জন স্বামী এরকমটা করতে পারবেন?


নবী (সাঃ) শেষ সময়, ইন্তেকালের সময়ও উনি আয়েশা (রাঃ) এর কোলে মাথা রাখা ছিলেন!! কিভাবে প্রেম করতে হয়? ভালোবাসতে হয়, তা তিনি শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন ☺ নিজের স্ত্রীর চোখের পানি, নিজের হাত দিয়ে দূর দিয়েছেন হযরত (সাঃ) ।

তবে আপনাকে এই প্রেম ভালোবাসা সবকিছুই বিবাহের পর স্ত্রী এর সঙ্গে করতে হবে। বিবাহ বহির্ভূত প্রেম ইসলামে হারাম হারাম হারাম।


অথচ আজ এই যুগে, পোলা মেয়েরা মনেই করে, ধরেই নেয় প্রেম হালাল। হারাম কে তারা হালাল বানিয়ে নিচ্ছেন, কি সাংঘাতিক!! অনেকে আবার বলে, আমার প্রেম করার উদ্দেশ্য তো সত‍্য, সমস্যা কই? কিন্তু, তারা জানে না বিবাহ বহির্ভূত সব ধরনের প্রেম, ভালোবাসা এক ধরনের জিনা। নিজের অজান্তেই হাজারো ছেলে মেয়ে, নিজের কুমারত্ব /কুমারিত্ব বিকৃত করে দিচ্ছে, নিজের বউ বা স্বামীর আমানত বিয়ের পূর্বেই ভ্যানিশ করে দিচ্ছেন। এগুলো, যারা প্রেম করছে তারা কি জানে? তারা বান্দার হক বিকৃত (নিজের বর /স্ত্রীর) করছে!! এসব কিছুর মাফ আপনি কিভাবে নিবেন? আল্লাহর হক নষ্ট করলেন, তার মাফ আল্লাহ্ তায়ালা মাফ করবেন ইনশাআল্লাহ, তা সত্ত্বেও হাজার হাজার যুবক-যুবতীরা যে অন্যকারোর হক নষ্ট করছেন, এর মাফ কেমন করে নিবেন, চিন্তা করে দেখতে পারবেন কিন্তু, আফসোস!! শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বিশেষ করে ভার্সিটি গুলোতে আজ যে ক্রাশ খাওয়া, প্রেম করা, হোটেল এ যাওয়া এসব এতটাই কমন, যে এসব যে কতবড় পাপ, তা আর কারো মাথায়ই নাই 😥 বড়োই আফসোস।

বেগানা পুরুষের সাথে বেগানা নারীর প্রেম পিরিত হারাম। প্রেম জায়েজ কিন্তু সেটা আপনার বিবাহিত স্ত্রীর সাথে ইসলামে প্রেম করা জায়েজ। কিন্তু সেই প্রেম থেকে হবে বাবার প্রতি সন্তানের যে প্রেম থাকে, প্রতিবেশির প্রতি প্রতিবেশির যে প্রেম থাকে। যদি আপনার কোন যুবতী মেয়ের প্রতি যৌন উত্তেজিত প্রেম থাকে তাহলে সেই প্রেম একেবারেই জায়েজ নয়।

বিবাহ পূর্বকাল প্রেম হারাম।


স্বাধীনভাবে লালসা পূরণ পক্ষান্তরে গোপনে লুকিয়ে প্রেমলীলা করবে না (সূরা আল মায়িদা: ৫)

এরপর সূরা নূর এর ৩০ নং আয়াতে পুরুষদের আঁখি নীচু রাখতে এবং লজ্জা স্থান হিফাজত করতে জানানো হয়েছে।

৩১ নং আয়াতে নারীদেরও সেইম কথা জানানো হয়েছে, পর্দা করার কথা জানানো হয়েছে আর নারীরা কাদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারবে তাদের একটা লিস্ট দেওয়া হয়েছে।

সূরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াতে পর্দা করার নির্দেশ আরো পরিস্কার ভাষায় জানানো হয়েছে। যেখানে দৃষ্টি নীচু এবং সংযত রাখা, লজ্জাস্থান হিফাজত করার কথা ও পর্দা করার কথা বলা হয়েছে আর সূরা মায়িদাতে লুকানো প্রেমলীলাকে নিষেধ করা হয়ে গিয়েছে সেখানে বিবাহ পূর্ব প্রেম বৈধ হতে পারে কি করে?? এটি হারাম!!


জিনা তথা বে-আইনি শারীরীক সম্পর্ক হারাম। (সূরা ইসরা আয়াতঃ ৩২) (সূরা ফুরকানঃ ৬৮)

জিনার নিকট যাওয়াই নিষেধ অর্থাৎ যে সব জিনিস জিনার আসন্ন করে দেয় তার কাছে যাওয়াই নিষেধ। বিবাহ পূর্ব প্রেম নর-নারীকে জিনার নিকটবর্তী করে দেয় আর জিনা সাংঘাতিক ১টি কবিরা গুণাহ।


বিবাহপূর্ব প্রেম অনেক সময়ে বান্দাকে শিরকের আসন্ন করে দেয়। কারণ একটা সময় তারা একে অপরকে এতটাই ভালবাসা আরম্ভ করে দেয় যে প্রকার ভালবাসা পাওয়ার দাবীদার একমাত্র আল্লাহ। (সূরা বাকারাঃ১৬৫)

শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা এবং দ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে ও আল্লাহর ভাবনা ও নামায হতে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখনোও কি নিবৃত্ত হবে? (সূরা আল মায়েদাহ, আয়াত নং ৯০ থেকে ৯১)।


আসলে ইসলাম এরূপ একটি ধর্ম যা মানুষকে গুনাহ হতে বাঁচতে বিভিন্ন পথ বাতলে দেয়। প্রেম করলে শয়তান নিশ্চয়ই জিনা করতে আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে। ইসলামে বিয়ের আগে প্রেম করা হারাম।

মোঃ মোশিউর রহমান আতিক, সম্পাদক, আল মুনাদিয়া

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন